আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান ও তার সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) অবমাননার মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইসিপি সদস্য নিসার দুররানির নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাওয়ালপিন্ডি কেন্দ্রীয় কারাগারে মামলার শুনানি চলাকালে তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন।
জানা গেছে, পিটিআইয়ের আইনি দলের প্রধান শোয়েব শাহীন সুপ্রিম কোর্টে ব্যস্ত থাকায় দলের প্রধান কৌঁসুলি ইসিপিকে শুনানি স্থগিত রাখতে অনুরোধ করেছিলেন। তাছাড়া কারাগারে ইমরান খানের বিচারকার্য চালানোর বিরুদ্ধে আবেদন করতে চান তারা। তবে ইসিপি পিটিআই আইনজীবীর উভয় আবেদনই খারিজ করে দিয়ে শুনানি ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেন।
পরে, আদিয়ালা কারাগারের বাইরে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় পিটিআইয়ের আরেক আইনজীবী আলি বুখারি জানান, ইসিপির এই অভিযোগ তারা উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করবেন। পিটিআইয়ের আইনজীবী আমির নিয়াজি বলেন, অভিযোগপত্রে এমন কিছু নেই, যা নির্বাচন কমিশন অবমাননার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারে।
পিটিআই নেতা আসগর চৌধুরী কারাগারের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, ইমরান খান এ অভিযোগের জন্য ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি ইসিপি সদস্যদের পক্ষপাতদুষ্ট বলেছেন। ইমরান খান আরও বলেন, একদিন ইসিপির এসব সদস্যদের সংবিধানের ৬ ধারায় গুরুতর রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য বিচার করা হবে।
আলাদা একটি সংবাদ সম্মেলনে ফাওয়াদ চৌধুরীর স্ত্রী হিবা ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, শুনানির সময় ইমরান খান বলেছিলেন যে নির্বাচন কমিশনের এক সদস্যের বিরুদ্ধে একটি বিদ্যমান রেফারেন্স ছিল এবং তিনি শুনানির অংশ হতে পারবেন না বলেও বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আজও বেঞ্চের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এমনকি, ফাওয়াদকে তার বিরুদ্ধে জারি করা চারটি কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়নি।
গত বছর দেশটির নির্বাচন কমিশন ও সিইসির বিরুদ্ধে অশালীন ভাষা ব্যবহারের অভিযোগে পিটিআই প্রধানসহ দলটির সাবেক মহাসচিব আসাদ উমর ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাওয়াদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ইসিপি।
পরে ইসিপির সদস্য নিসার দুররানির নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের বেঞ্চে হাজির হয়ে ইমরান খান ও অন্যদের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কয়েক দফায় নোটিশও পাঠানো হয়। কিন্তু পিটিআই নেতারা ইসিপির বেঞ্চে হাজির হননি। এর পরিবর্তে দেশটির উচ্চ আদালতে নির্বাচন আইন-২০১৭ এর ১০ ধারার আওতায় ইসিপির অবমাননার মামলা দায়েরের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করেন পিটিআই নেতারা।
চলতি বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খান ও পিটিআইয়ের অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইসিপিকে অনুমোদন দেয়। গত বছরের ২১ জুন নির্বাচন কমিশন ও সিইসিকে অবমাননার মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পেলেও ইসিপিকে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার ক্ষমতা দেয়নি দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
কয়েক দফায় নোটিশ পাঠানো হলেও নির্বাচন কমিশনের গঠিত বিচারিক বেঞ্চের শুনানিতে ইমরান খান ও তার দলের নেতারা হাজির হননি। একইভাবে শুনানিতেও ইমরান খান, ফাওয়াদ চৌধুরী ও আসাদ উমরের কেউই ইসিপিতে উপস্থিত হননি। পরে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে ২৫ জুলাই ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
সূত্র: দ্য ট্রিবিউন এক্সপ্রেস